দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবাখাতের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস।
প্রতিষ্ঠানটি দেশের অর্থনীতিতে রাখছে বিশাল অবদান। বেসিস এর বর্তমান অবস্থা ও আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীরের সঙ্গে। সাক্ষাত্কারটি নিয়েছেন মাহবুব শরীফ
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)এর বর্তমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ আলমাস কবির। কথা হচ্ছিল প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন দিক নিয়ে।
এর আগে প্রতিষ্ঠানটি তথ্যপ্রযুক্তিতে ১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রায় নিয়েছিল। সৈয়দ আলমাস কবীরের কাজে পূর্ব ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘ ২০১৪ সালে আমরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছিলাম।
লক্ষ্যমাত্রার মেয়াদ ছিল ২০১৮’র ডিসেম্বর পর্যন্ত। আমরা এই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি।’
২০১৮’র ডিসেম্বরের আগেই ১ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা সম্ভব হতো যদি সংশ্লিষ্ট খাতের আর্নিং এর হিসাব যথাযথ থাকত। অনেক সময়ই এই খাতের আর্নিং প্রোপার ব্যাংকিং চ্যানেলে আসে না।
আবার কেউ কেউ আর্নিং এর একটা বড় অংশ দেশের বাইরেই রেখে দেয়। এর কারণ হলো- যখন বিদেশে তার অর্থের প্রয়োজন হয় তখন তা স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্যবহার করতে পারেন।
দেশের অনেক ফ্রিল্যান্সার আছেন যারা বেসিস এর তালিকাভুক্ত নয়। তারা যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে সেটার সঠিক তথ্যও বেসিস এর কাছে না থাকার কারণে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কী পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আসছে বলা কঠিন হচ্ছে বলেও জানান বেসিস সভাপতি।
১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পর আপনাদের পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘বেসিস এর নেতৃত্বে আগামী ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট খাতে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, মাত্র তিন বছরে ৫গুণ অর্জন কী করে সম্ভব? তাদের উদ্দেশে বলতে চাই- চলতি বছরে জুনে ‘ইনফো সরকার ৩’ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। এতে করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকেরা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা ভোগ করতে পারবে। ওই অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন রকম অনলাইন কার্যক্রম চালু হবে এবং একটি বিশাল কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
বেসিস এর ট্রেনিং কার্যক্রমের অধীনে ৩০ হাজার তরুণ/তরুণীদের বিভিন্ন বিষয়ে ট্রেনিং প্রদান করা হয়েছে। সম্প্রতিকালের হিসেব অনুযায়ী, এদের মধ্যে ৬০%দক্ষ শক্তি কাজের সঙ্গে জড়িত হয়েছে।
আগামী তিন বছরে এর সুফল মানুষ দেখতে পাবে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই জনশক্তি ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বিশাল ভূমিকা রাখবে। ’
এছাড়াও দেশে বর্তমানে ২৮টি হাই-টেক পার্ক তৈরির কাজ চলছে যা ক্রমান্বয়ে ১০০টিতে উন্নীত করা হবে।
এগুলোতে আগামী তিন বছরের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম চালু হবে, বিদেশি বিনিয়োগ আসবে এবং এখানে কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাবে বলে জানান আলমাস কবির।
বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তি বান্ধব সরকার। এই খাতে সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোনোরকম ঝুঁকি থাকবে না।
বেসিস এর আগামী পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন,‘ যারা সংশ্লিষ্টখাতে কর্মরত রয়েছেন তাদের দক্ষতা নির্ধারনের জন্য সার্টিফিকেশন পদ্ধতি চালু করবে বেসিস।
এতে করে যেমন প্রতিযোগিতামূলক একটি পরিবেশ তৈরি হবে ঠিক তেমনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দক্ষ লোকবলকে কাজে লাগাতে পারবে সহজেই। আর একটি পরিকল্পনা হলো- লোকাল বা দেশীয় সফটওয়্যারের প্রতি আমাদের আস্থার অভাব রয়েছে।
এজন্য সফটওয়্যারের মান সম্মন্ধে ব্যবহারকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করার জন্য সফটওয়্যার টেস্টিং পূর্বক সনদ প্রদানের পরিকল্পনাও রয়েছে আমাদের।’
বেসিস এর ট্রেনিং প্রকল্প বিআইটিএম-কে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। এখান থেকে তৈরি হওয়া দক্ষ লোকবল বিভিন্ন জায়গায় তাদের দক্ষতার প্রমাণ দিতে সক্ষম হবে বলেও মনে করেন তিনি।
বেসিস মেম্বরদের আইনী সহায়তা, অর্থায়নের সহায়তা, ভ্যাট ও ট্যাক্স সম্পর্কে সহায়তাসহ বিভিন্ন রকম সেবা প্রদান করে একটি গ্রোথ ইকোসিস্টেম তৈরির কাজ অব্যহত রয়েছে।
এছাড়াও দেশীয় সফটওয়্যার ও দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাধান্য দিতেও কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
সরকারি বিভিন্ন কাজ প্রাপ্তিতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অন্তত ৫ মার্ক বেশি দিয়ে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন,‘ অনেক সময় বিদেশি অর্থানে যে উন্নয়নমূক কাজ হয়ে থাকে সে কাজগুলোতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পণ্য ক্রয়ের বাধ্যবাধকতা থাকে। সে ক্ষেত্রে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার শর্ত অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।’
বেসিস এর গত এক বছরের সফলতা নিয়েও কথা বলেন আলমাস কবীর। উল্লেখযোগ্য অনেকগুলো বিষয়ের মধ্য থেকে কয়েকটি নিয়ে আলোচনা হয় তার সঙ্গে। এসময় তিনি বলেন,‘ দেশে আইসিটি নীতিমালা হয়েছে ২০০৯ সালে এবং ২০১৮ সালেও সেটিকে হালনাগাত করা হয়।
উভয় সময়ই বেসিস এর প্রস্তাবনাগুলোকে নীতিমালায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ২০১৮’র নীতিমালাও বেসিসের প্রস্তাবনাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ’
তিনি আরো বলেন,‘ যে সকল স্কুল-কলেজে ও হাসপাতাল সরকারি অনুদান পেয়ে থাকে। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে অটোমেশন থাকলে তাদেরকে অগ্রাধীকার দেয়া হবে।
এই শর্তও বেসিস এর প্রস্তাবনায় আইসিটি নীতিমালায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। এতে সরকারি অনুদান পেতে অনেক স্কুল-কলেজ ও হাসপাতাল অটোমেশন এর দিতে ঝুঁকবে এর ফলশ্রুতিতে আইসিটি খাতে বড় একটি কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে।’
সম্প্রতির আরো একটি সফলতা হলো- এনবিআর কর্তৃক ভ্যাট সফটওয়্যারগুলোর স্বীকৃতি প্রদান। যে প্রতিষ্ঠানগুলো ৫ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট দেয় তাদের বিলিং পদ্ধতি অবশ্যই সফটওয়্যারের মাধ্যমে হতে হবে।
এনবিআর এই সফটওয়্যারগুলোকে তালিকাবদ্ধ করবে। এতে করে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ হারিয়ে যাবে পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহার শুরু হবে।
ফলশ্রুতিতে সংশ্লিষ্ট কাজে লোকবল নিয়োজিত হবে বলেও মনে করেন বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর।