যদি স্বর্গ দেখতে চাও, তাহলে বাংলাদেশে এসো – উক্তিটি করেছিলেন কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী ক্লে। তিন বার হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন শিরোপা জয়ী বক্সিং ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড়।
১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির লুইভিলাতে মোহাম্মদ আলী জন্মগ্রহণ করেন। জন্মগ্রহণের পর মোহাম্মদ আলীর নাম পিতা ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে সিনিয়রের নামে ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে জুনিয়র রাখা হয়।
১৯৬৪ সালে ২২ বছর বয়সে তিনি নেশন অব মুসলিমে যোগ দিলে তার নাম রাখা হয় ক্যাসিয়াস এক্স।
এর কিছুদিন পর নেশন অব মুসলিমের প্রধান সাংবাদিকদের সামনে তাকে মোহাম্মদ আলী বলে পরিচয় করিয়ে দেন। ১৯৭৫ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
কিংবদন্তি এ বক্সার মোট ৬১টি লড়াইয়ের মধ্যে ৫৬টিতেই জিতেছেন। হেরেছেন মাত্র ৫ বার! ৬১টি লড়াইয়ের মধ্যে ৩৭টি লড়াইয়ে প্রতিপক্ষকে নকআউট করে জিতেছেন।
মোহাম্মদ আলীর বক্সিং প্রতিভার প্রকাশ পেয়েছিল ছেলেবেলাতেই। একবার লুইভিলার পুলিশ অফিসার ১২ বছর বয়সি ক্লেকে এক সাইকেল চোরের সঙ্গে মারপিট করতে দেখেন। তিনি তখন ক্লেকে বক্সিং শিখতে বলেন। শুরু হয় জো মার্টিন এর অধীনে তার বক্সিং প্রশিক্ষন।
মোহাম্মদ আলী ক্লে ১৯৫৪ সালে প্রথম অপেশাদার বক্সিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ছয়বার কেন্টাকি গোল্ডেন গ্লাভস, দু’বার জাতীয় গোল্ডেন গ্লাভস উপাধি লাভ করেন তিনি ।
এরপর রোমে অনুষ্ঠিত ১৯৬০ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে বক্সিং প্রতিযোগিতায় লাইট হেভিওয়েট বিভাগে স্বর্ণপদক লাভ করেন।
১৯৬০ সালের ২৯ অক্টোবর পেশাদার বক্সিং প্রতিযোগিতায় আলী প্রথমবারের মতো অংশ নেন। ৬ রাউন্ডে পরাজিত করেন টানি হানসাকারকে। ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত আলী ১৯-০ জয়ের রেকর্ড করেন। এর মধ্যে ১৫টি নকআউট জয়।
১৯৬৪ সালে ২২ বছর বয়সে তিনি সনি লিস্টনকে পরাজিত করে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেন। শিরোপা জয় করে খ্যাতির স্বর্ণশিখরে দ্রুত পৌঁছে যান আলী।
আলী ১৯৬৬ সালে ক্লিভলান্ড উইলিয়ামসের সঙ্গে লড়াই করেন। এটি তার সেরা ম্যাচগুলোর একটি। এ ম্যাচে তিনি ৩ রাউন্ডে জেতেন।
মোহম্মদ আলী ক্লে ১৯৬৭ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার অংশগ্রহণের বিরোধিতা করেন এবং যুদ্ধে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ইতিহাসে সম্মানীয় হয়ে আছেন। সে সময় আমেরিকা সরকার তাকে দোষী সাব্যস্ত করে বক্সিং উপাধি কেড়ে নেয়। আলী তার জীবনের সেরা সময়ে পরবর্তী চার বছর কোনো ধরনের বক্সিং প্রতিযোগিতায় নামতে পারেননি।
১৯৮০ সালে শিষ্য ল্যারি হোমসের কাছ থেকে শিরোপা ছিনিয়ে নিতে আলী রিং-এ ফেরেন। কিন্তু ১১ রাউন্ড পর আলী পরাজিত হন। পরে জানা যায় মস্তিষ্কে মারাত্মক ত্রুটি ধরা পড়েছে। তার মস্তিষ্ক ফুটো হয়ে গিয়েছিল। পরে তিনি ১৯৮১ সালে পুরোপুরি অবসর গ্রহণ করেন এ অবিসংবাদিত সেরা মুষ্টিযোদ্ধা।
মোহাম্মদ আলী ক্লে ১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে ৫ দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সেই সফরে বাংলাদেশ সরকার তাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করে। পল্টনের বক্সিং স্টেডিয়ামের নাম তার নামে রাখা হয়।
১৯৮০ সালে পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হন এ মুষ্টিযোদ্ধা। ৩২ বছর পারকিনসন্স রোগে ভোগার পর ২০১৬ সালের ৩ জুন ৭৪ বছর বয়সে মারা যান।
আলী নিজের ক্যারিয়ার বিষয়ে ‘দ্য গ্রেটেস্ট : মাই ওন স্টোরি’ এবং নিজের জীবনী ‘দ্য সোল অব অ্যা বাটারফ্লাই’সহ আরও কিছু বইও লিখে গেছেন।