অবৈধ হ্যান্ডসেটের প্রবেশ বন্ধের পাশাপাশি হ্যান্ডসেটের সত্যতা নিশ্চিত করতে আন্তজার্তিক মোবাইল ফোন যন্ত্রপাতি পরিচয় (আইএমইআই) ডেটাবেস চালু করছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশন (বিটিআরসি)।
মঙ্গলবার থেকে গ্রাহক জানতে পারবেন তার মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বরটি বাংলাদেশ টেযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ডেটাবেজে আছে কি নেই?
এর জন্যে গ্রাহককে তার ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বরটি এমএমএস করে সেন্ড করতে হবে ১৬০০২ নম্বরে। ফিরতি এসএমএস-এ গ্রাহক এ সংক্রান্ত তথ্য পেয়ে যাবেন বিটিআরসির কাছ থেকে।
সম্প্রতি মোবাইল ইম্পোটার্স অ্যাসোশিয়েশনের পক্ষ থেকে বিটিআরসিতে স্থাপন করা হয়েছে আইএমইআই সংক্রান্ত একটি ডেটাবেজ। সেখানে মোবাইল ফোন অপারেটরদের আমদানী করা সকল ফোনের আইএমইআই সংক্রান্ত তথ্য রাখা আছে। একই সঙ্গে মোবাইল ফোন অপারেটদের নেটওয়ার্কে থাকা আইএমইআই-ও রাখা হচ্ছে সেখানে।
আর এর মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে এটি ডেটাবেজ-যা ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে কাজ করতে শুরু করলেও মঙ্গলবার দুপুরে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার তা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন।
জানতে চাইলে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘গ্রাহকদের হ্যান্ডসেটের গুনগত মান নিশ্চিতের পাশাপাশি সকলের সুবিধার্থে আইএমইআই ডেটাবেস চালু করা হচ্ছে। এটি চালু হলে দেশে অবৈধভাবে হ্যান্ডসেট প্রবেশ বন্ধ হবে। সেই সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি চলতি মাসেই আইএমইআই ডেটাবেস চালু করতে পারবো। এ মাসের যে কোনো দিন এটি চালু হতে পারে। এটি সম্পূর্ণ হলে আমরা পর্যায়ক্রমে ন্যাশনাল ইক্যুইমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) চালু করবো।
আর এনইআইআর চালু হলে তখন আর গ্রাহকদের হ্যান্ডসেন্ট চুরি বা হারানোর কোনো ভয় থাকবে না। এখানে ফোনের ডিটেলইস থাকবে। গ্রাহকদের চুরি বা হারিয়ে যাওয়া ফোন সাথে সাথে বন্ধ করাসহ সেটিও সনান্ত করতে সহযোগিতা করতে এনইআইআর।’
বিটিআরসি’র কার্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে এই ডেটাবেজ। আগামী কয়েক মাস চলবে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম। এর মধ্যে কয়েক মাস যে সব নতুন হ্যান্ডসেট বৈধভাবে আমদানি করা হবে সেগুলোই ডেটাবেজে ঢুকবে। বাকি কোনো আইএমইআই-এর আর কাজ করবে না।
আর বৈধভাবে বা অবৈধভাবে যে কোনো পদ্ধতিতে দেশে আসুক না কেনো আগামী কয়েক মাসে যে সব আইএমইআই এই ডেটাবেজে ঢুকবে সেগুলো বাতিল না হওয়া পর্যন্ত কাজ করবে। তবে বৈধভাবে আমদানি না করা আইএমইআই থাকা ফোনগুলো কেবল এখন যে সিমের সঙ্গে ব্যবহার হচ্ছে অকেজো না হওয়া পর্যন্ত সেই সিমেই কেবল হ্যান্ডসেটটি চলবে।
বিএমপিআইএ’র তথ্যমতে, অবৈধ পথে আসা মোবাইল ফোনের কারণে তাদের সংগঠনের সদস্যরা বাজার হারাচ্ছে। আর ব্যবসায়ীরা গ্রে মার্কেটে মোবাইল অনেক কম দামে বিক্রি করতে পারছেন। ওদের দামের কাছে তারা টিকতে পারছেন না। ফলে তারা বাজার হারাচ্ছেন, আর অবৈধ ব্যবসায়ীদের বাজার বড় হচ্ছে।
অবৈধ ফোনগুলোর ওয়ারেন্টি ও সার্ভিস ওয়ারেন্টি না দিয়ে, কম মূল্য হ্যান্ডসেট দিয়ে শুধু সার্ভিস ওয়ারেন্টি অফার করে থাকে। এতে ক্রেতারাও নিজের অজান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আইএমইআই ডেটাবেস তৈরি, নিবন্ধনের ব্যবস্থা এবং প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকলে দেশে অবৈধ পথে মোবাইল ফোনের প্রবেশ বন্ধ হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, এর পর যখন জাতীয় আইএমইআই নিবন্ধন চালু হবে তখন সিমের সঙ্গে আইএমইআই-এর নিবন্ধনে যুক্ত হয়ে যাবে। আর আগে যেহেতু জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সিম নিবন্ধন হয়েছে তখন আইএমইআই, সিম এবং জাতীয় পরিচয়পত্র তিনটি দিয়ে গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিত করা যাবে। কার্যকর হয়ে গেলে দেশে আর হ্যান্ডসেটের চুরি-ছিনতাই একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে।
তাছাড়া অবৈধ আমাদানীও বন্ধ হয়ে যাবে এবং সরকারের রাজস্ব নিশ্চিত হবে। সর্বোপরি মোবাইল হ্যান্ডসেটের ব্যবসায় শৃংঙ্খলা ফিরে আসবে। বলা হচ্ছে, এখন বছরে প্রায় সাড়ে তিন কোটি হ্যান্ডসেট আমদানি হয়। এর বাইরে আরও অন্তত এক কোটি হ্যান্ডসেট আসে অবৈধ পথে যেগুলো থেকে সরকার কোনো ট্যাক্স পায় না বা নিরাপত্তার দিক দিয়েও সেখানেও সমস্যা থেকে যায়।
তিনি জানান মূলত তিনটি ধাপে এই প্রক্রিয়াটি শুরু করা হবে।
প্রথম ধাপ: বৈধ ফোন চিনে রাখুন
প্রথমত, বাংলাদেশে যতোগুলো হ্যান্ডসেট বৈধভাবে আমদানি হচ্ছে এবং স্থানীয়ভাবে যে মোবাইলগুলো অ্যাসেমব্লিং করা হচ্ছে বা উৎপাদিত হচ্ছে সেগুলোর ১৫ ডিজিটের স্বতন্ত্র আইএমইআই নম্বর নিয়ে একটি বৈধ ফোনের ডাটাবেজ তৈরি করা হবে।
এতে মানুষ যখন মোবাইল ফোন কিনতে যাবেন তখন তারা সেই সেটটির আইএমইআই নম্বর দিয়ে জানতে পারবেন যে তাদের সেটটি বৈধ নাকি অবৈধ। ইআইআর এর মাধ্যমে দেশের প্রতিটি সক্রিয় সেটকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে।
দ্বিতীয় ধাপ: হ্যান্ডসেট কিভাবে নিবন্ধন করবেন
দ্বিতীয় ধাপে বিটিআরসি তাদের ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (ইআইআর) খসড়া নির্দেশনা- ইআইআর তৈরি করবে। যার আওতায় দেশের প্রতিটি সক্রিয় সেটকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। এরিমধ্যে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির ইআইআর যাচাই করে বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য ২৪ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিটিআরসি।
প্রতিবেদনটি যাচাইয়ের জন্য মোবাইল অপারেটরগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখানে যদি কোন সংশোধনের প্রয়োজন তাহলে সেটা সম্পন্ন করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রতিবেদনটি বিটিআরসির কমিশনে পাঠানো হবে।
ফোনের আইএমইআই নম্বর যাচাই করে দেখুন আপনার সেটটি বৈধ কিনা। খসড়া নির্দেশনাটিকে চূড়ান্ত হলে প্রত্যেক অপারেটরকে তাদের নেটওয়ার্কের আওতায় থাকা প্রতিটি সক্রিয় হ্যান্ড-সেটের ডাটাবেজ তৈরির সময় বেঁধে দেয়া হবে।
এখানে গ্রাহকদের হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের জন্য কোথাও যেতে হবেনা। তারা নিজেদের নিবন্ধিত সিমটি সেটে সক্রিয় করলেই সেটটি ওই নামে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধন হয়ে যাবে।
ওই সেটে যদি দ্বিতীয় সিম ব্যবহার করতে হয় তাহলে সেটাও অবশ্যই একই নামে নিবন্ধিত সিম হতে হবে। এছাড়া কারও যদি একাধিক সেট থাকে তাহলে তিনি দ্বিতীয় সেটটিতে যে নামের সিমটি সক্রিয় করবেন, সেই নামেই সেটটি নিবন্ধিত হয়ে যাবে। তখন ওই সেটে অন্য নামের কোন সিম চলবেনা। অর্থাৎ একটি সেট একজনের নামেই নিবন্ধিত হবে। এভাবে একেকটি অপারেটরের আলাদা ডাটাবেজ সম্পন্ন হবে।
তৃতীয় ধাপ: কমন সার্ভার
তৃতীয় ধাপে সরকার একটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করবে যারা বিটিআরসির জন্য এই কেন্দ্রীয় প্লাটফর্ম বা কমন সার্ভার তৈরি করবে। যেখানে প্রত্যেকটি অপারেটরের ডাটাবেজগুলো সিঙ্ক্রোনাইজ হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশে সক্রিয় প্রতিটি হ্যান্ডসেট কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হবে।
তখন এর নাম হবে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার- এনইআইআর। এতে ইআইআর এ নতুন কোন ডেটা সংযুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা এনইআইআরে চলে আসবে।