কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ তীরে আজ (শুক্রবার) বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ৫১তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের পদচারণনায় শিল্প শহর টঙ্গী এখন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা জামাতবদ্ধ হয়ে এখনো ইজতেমা স্থলে আসছেন।
ক্রবার বাদ ফজর আম বয়ারের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবারের বিশ্ব ইজতমার আনুষ্ঠানিকতা। বাদ ফজর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মো. আব্দুল মতিন। পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষায় এই বয়ান তরজমা করা হচ্ছে। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজে ইমামতি করবেন বাংলাদেশের কারি মো. জুবায়ের।
জানা গেছে, বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের শুরা সদস্য ও বুজর্গরা বয়ান পেশ করবেন। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ করা হয়। ইজতেমায় বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শোনান।
এদিকে ইজতেমা শুরুর দিন শুক্রবার হওয়ায় ইজতেমা মাঠে জুমার নামেজে অংশ নিতে অনেক মুসল্লি আগেই ইজতেমাস্থলে এসেছেন। ইজতেমায় যোগদানকারী মুসল্লি ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশে-পাশের এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমাস্থলে আসছেন।
এবারে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপে পুরো ময়দানকে ২৭টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ঢাকাসহ দেশের ১৭ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন।
হরতাল উপেক্ষা করে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে থেকে মুসল্লিদের বাস, ট্রাক, পিক-আপ, ব্যক্তিগত গাড়ি ও নদী পথে টঙ্গীর ইজতেমাস্থলে আসতে দেখা গেছে। পরে মুসল্লিরা নিজ নিজ মালামাল ও ব্যাগ কাধে-পিঠে নিয়ে ইজতেমা মাঠের নির্ধারিত স্থানে (খিত্তায়) অবস্থান নিচ্ছেন।
ক্রমবর্ধমান মুসল্লিদের কথা বিচেনায় রেখে তাদের কষ্ট লাগব করতে এবার বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বে মোট ৩২ জেলার মুসল্লি অংশ নিচ্ছেন। প্রথম পর্বে অংশ নেবেন ঢাকাসহ ১৭ জেলা। দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন ঢাকাসহ ১৬ জেলার মুসল্লি। তবে জামাতবদ্ধ তাবলিগ সদস্য ছাড়াও সাধারণ মুসল্লিদের ইজতেমায় অংশ নিতে বাধা নেই।
ইজতেমা মাঠ ও আশপাশ এলাকায় পুলিশের পাশাপশি র্যাব সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। র্যাবের হেলিকপ্টার টহল দিতে দেখা গেছে। স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ইত্যাদি।
মুসল্লিদের পারাপারের জন্য ইজতেমা ময়দানের সংলগ্ন তুরাগ নদীর ওপর আট স্থানে আটটি ভাসমান সেতু স্থাপন করেছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জনিয়েছেন, ইজতেমা এলাকায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নিরাপত্তায় ১২ হাজার পুলিশ ও র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে ১৭ জেলার মুসল্লিরা খিত্তাওয়ারী যেভাবে অবস্থান নেবেন তা হলো- ১ নম্বর থেকে ৬ নম্বর খিত্তায় ঢাকা জেলা, ৭ নম্বর খিত্তায় শেরপুর, ৮ ও ১১ নম্বর খিত্তায় নারায়নগঞ্জ, ৯ নম্বর খিত্তায় নীলফামারী, ১০ নম্বর খিত্তায় সিরাজগঞ্জ, ১২ নম্বর খিত্তায় নাটোর, ১৩ নম্বর খিত্তায় গাইবান্ধা, ১৪ ও ১৫ নম্বর খিত্তায় লক্ষীপুর, ১৬ ও ১৭ নম্বর খিত্তায় সিলেট, ১৮ ও ১৯ নম্বর খিত্তায় চট্টগ্রাম, ২০ নম্বর খিত্তায় নড়াইল, ২১ নম্বর খিত্তায় মাদারীপুর, ২২ ও ২৩ নম্বর খিত্তায় ভোলা, ২৪ নম্বর খিত্তায় মাগুরা, ২৫ নম্বর খিত্তায় পটুয়াখালী, ২৬ নম্বর খিত্তায় ঝালকাঠি এবং ২৭ নম্বর খিত্তায় পঞ্চগড় জেলা।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাহেনুল ইসলাম জানান, টঙ্গীর ইজতেমাস্থল ও আশেপাশের এলাকায় ইজতেমা চলাকালে প্রতিদিন তিন পালায় সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ এবং ট্রাফিক কাজে চারটি এবং হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন দোকানে খাবারের মান ও মেয়াদ যাচাইয়ে আরো ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।
গাজীপুরের ১৪ জনসহ বিভিন্ন জেলার ২৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওইসব আদালত পরিচালনা করছেন।
এ পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নিতে আসা তিন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজন গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এবং অন্য দুজন রাতে মারা গেছেন।