দেশের স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে এতে সাড়ে সাত শ কোটি টাকার বেশি অর্থায়নে স্থলবন্দর উন্নয়নের এই পরিকল্পনা নিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের আশা এর ফলে দেশের আমদানি-রপ্তানি গতিশীল হবে। একই সঙ্গে বাড়বে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে আন্ত বাণিজ্য। এ ছাড়া দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাকসহ অন্য সব রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের সময় বা লিড টাইম কমে আসবে কয়েক গুণ।
স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বন্দরের উন্নয়নের জন্য হাতে নেওয়া হয়েছে প্রায় ৭৬০ কোটি টাকার প্রকল্প। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করছে ৫৯৩ কোটি টাকা। বাকি অর্থ ব্যয় করবে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেকটিভিটি প্রকল্পের অধীনে শেওলা, ভোমরা, রামগড় স্থলবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নকাজ করা হবে। এসব উন্নয়নকাজের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক দেবে ৫৯২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। বাকি অর্থ দেবে সরকার।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, স্থলবন্দরের যেসব উন্নয়নমূলক কাজ চলছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বেনাপোলসহ চারটি বন্দরের উন্নয়নকাজ। এর মধ্যে শেওলা বন্দরের উন্নয়নকাজের জন্য এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এবং দরপত্র মূল্যায়ন কাজ চলছে। এসব উন্নয়নকাজ শেষ হলে দেশের অর্থনীতিতেই আমূল পরিবর্তন আসবে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে আন্ত বাণিজ্য বাড়বে এবং প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে।
আগামী দুই বছরের মধ্যে এসব উন্নয়নকাজ শেষ হবে উল্লেখ করে তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে স্থলবন্দরের আয় আরো ১০০ কোটি টাকা বেড়ে হবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। সদ্য বিদায়ি অর্থবছরের এই বন্দরগুলো থেকে আয় হয় ২০০ কোটি টাকার বেশি। এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ শতাংশ।
জানা যায়, বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তা কাজের উন্নয়নের জন্য এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এবং মূল্যায়ন চলছে। তা ছাড়া ভোমরা ও রামগড় স্থলবন্দরের উন্নয়নের জন্য এরই মধ্যে প্রতিটির জন্য ১০ একর করে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তা ছাড়া এসব স্থলবন্দরের অন্যান্য উন্নয়নকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এই চার বন্দরের উন্নয়নকাজের পাশাপাশি ৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে উন্নয়নকাজ চলছে বাল্লা স্থলবন্দরের, ৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে উন্নয়নকাজ চলছে বিলোনিয়া স্থলবন্দরের, ৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে উন্নয়নকাজ চলছে গোবরাকুড়া কড়ইতলী স্থলবন্দরের এবং ৫৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে উন্নয়নকাজ চলছে ধনুয়া কামালপুর স্থলবন্দরের উন্নয়নকাজ।
স্থলবন্দরের পাশাপাশি বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয় নির্মাণ প্রকল্পের কাজও এগিয়ে চলছে। রাজধানীর শেরেবাংলানগর এলাকার আগারগাঁওয়ে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে সংস্থাটির সদর দপ্তর। এরই মধ্যে প্রধান কার্যালয়ের ২০ শতাংশ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রধান কার্যালয় এবং অন্য স্থলবন্দরের নির্মাণকাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, প্রধান কার্যালয়ের কাজে ভালো অগ্রগতি আছে। তা ছাড়া বাল্লা স্থলবন্দরের উন্নয়নকাজের ১৬ শতাংশ কাজ এরই মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। তা ছাড়া এ বন্দরের সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজও চলছে। বিলোনিয়া স্থলবন্দরের সম্প্রসারণের জন্য এরই মধ্যেই ১০ একর জমি করা হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বানের পর মূল্যায়ন চলছে। গোবরাকুড়া কড়ইতলী স্থলবন্দরের জন্য ৩১ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে এবং দরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলছে। তা ছাড়া ধনুয়াকামালপুর স্থলবন্দরের উন্নয়নের জন্য ১৬ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ পর্যায়ে এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাক শিল্প। এই শিল্পের অনেক কাঁচামাল আসে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। এসব পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে দেশের স্থলবন্দরগুলোর প্রয়োজনীয় সক্ষমতা নেই। সরকার ও বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে স্থলবন্দর উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে আমাদের পণ্য রপ্তানি লিড টাইম (পণ্য জাহাজীকরণের সময়) অনেক কমে আসবে।
বন্দর সূত্র জানায়, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে বর্তমানে ২৪টি স্থলবন্দর রয়েছে। এর মধ্যে চালু রয়েছে ১২টি। এই ১২টির মধ্যে সাতটি পরিচালিত হয় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে, বাকি পাঁচটি পরিচালিত হয় বেসরকারি পর্যায়ে। তা ছাড়া ছয়টি স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলছে—এর মধ্যে আছে সিলেটের শেওলা, খাগড়াছড়ির রামগড়, ফেনীর বিলোনিয়া, ময়মনসিংহের গোবড়াকুড়া কড়ইতলী, জামালপুরের ধানুয়া কামালপুর এবং হবিগঞ্জের বাল্লা। সূত্র: কালের কণ্ঠ