পবিত্র কোরআনের শুরুতেই আল্লাহ তাআলা তিন শ্রেণীর মানুষের পরিচয় তুলে ধরছেন। ১ম শ্রেণী হলো ঈমানদার। ২য় শ্রেণী কাফির এবং ৩য় শ্রেণীর লোক হলো তারা যারা মুখে ঈমানের কথা প্রকাশ করে কিন্তু অন্তরে বিশ্বাস করে না অর্থাৎ মুনাফিক। উক্ত আয়াতগুলোতে মুনাফিকদের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
আল্লাহ বলেন-
আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়। তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারগণকে ধোঁকা দেয়। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না। তাদের অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ৮-১০)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনা হিজরতের পূর্বে মদিনাবাসীরা আবদুল্লাই ইবনে উবাইকে তাদের নেতা নির্বাচিত করেছিল এবং তার জন্য মুকুটও বানিয়েছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরত করে মদিনার নিরাপত্তা, শান্তি-শৃংঙ্খলা যে কোনো মূল্যে অক্ষুন্ন রাখার জন্য সেখানে বসবাসরত বিভিন্ন গোত্রকে নিয়ে সম্মেলনের আহবান করেন।
সে শান্তি সম্মেলনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বস্মমতিক্রমে নেতা নির্বাচন করা হয়। এতে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইর স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। ফলে সে ও তার দলবল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ইসলামের প্রতি শত্রুতা পোষণ করতে লাগল।
যদিও তারা প্রকাশ্যে ইসলামের কথা বলতো, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিশে উপস্থিত হতো, তাঁর কথাবার্তা শ্রবণ করতো, তাঁর কর্মসূচি সম্পর্কে অবগত হতো এবং পরে ইসলামের সব কর্মসূচি ও পরিকল্পনা ও বিজয়াভিযানকে রুখে দাঁড়াবার হীন এবং ঘৃণ্য প্রচেষ্টায় মেতে উঠতো। উক্ত আয়াতে এ সব মুনাফিকদের কর্মকাণ্ড ও শাস্তির কথা তুলে ধরেছেন।
ফলে দুনিয়াতে মুনাফিকরা হবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত। কারো কাছেই তারা সম্মান পাবে না। বরং সবাই তাদেরকে অবিশ্বাস করে। সামাজিকভাবে চরম হেয় প্রতিপন্ন হয়। পক্ষান্তরে পরকালে মুনাফিকদের অবস্থান আল্লাহ নির্ধারণ করে এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় মুনাফিকদেরকে জাহান্নামের সর্ব নিন্ম স্তরে নিক্ষেপ করা হবে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, এক ব্যক্তিকে বেহেশতের দ্বার খুলে তাকে প্রবেশ করতে ডাকা হবে, যখন সে বেহেশতের দ্বারের নিকটবর্তী হবে তখন সে দ্বার বন্ধ হয়ে যাবে, এরপর অন্য দ্বার থেকে থেকে আহবান করা হবেو যখন সে দ্বারের নিকটবর্তী হবে তখন সে দ্বারও বন্ধ হয়ে যাবে।
এরপর অন্য দ্বার থেকে থেকে আহবান করা হবে, যখন ঐ দ্বারের নিকটবর্তী হবে তখন সে দ্বারও বন্ধ হয়ে যাবে। এভাবে তাকে বারবার ডাকা হবে, অপমনা করা হবে। অবশেষে সে হতাশ হয়ে পড়বেو আহবান করলেও যাবে না। যারা দুনিয়াতে মুনাফিকী করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করবে, ছল-চাতুরীর মাধ্যমে মানুষকে কষ্ট দিবে, তাদেরকে এমনি শাস্তি দেয়া হবে পরকালীন জিন্দেগীতে।
সুতরাং আল্লাহ তাআলা সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে মুনাফিকী পরিহার করে প্রথম শ্রেণীর মানুষের কাতারে শামিল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।