১৪.২ ওভারে বল করছিলেন জিম্বাবুয়ের পানিয়াঙ্গারা। ক্রিজে তখন মাহমুদুল্লাহ আর লিটন কুমার দাস। এ সময় হঠাৎ করেই গ্যালারিতে হাজার হাজার আলোর ঝলকানি। দর্শকদের হাতে থাকা সেলফোনগুলোর ক্যামেরা, লাইট এক সাথেই যেন জ্বলে উঠলো। বাংলাদেশের বিজয়ের আরেকটা নিশান হয়েই যেন জন্ম নিলো দর্শকদের এই উদযাপন।
একদিন আগে মুস্তাফিজের বলে স্লিপে আট ফিল্ডার দাঁড় করিয়ে যখন মাশরাফি ফিল্ডিং সাজালেন, তখনও জ্বলে উঠেছিল হাজার হাজার সেলফোনের আলো। সেই আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল পুরো শেরে বাংলা স্টেডিয়াম। বিজয়ের ধারাবাহিকতা যেমন মাশরাফিরা ধরে রেখেছেন, তেমনি দর্শকরাও ধরে রাখলেন তাদের উদযাপনের ধারাবাহিকতা। সুতরাং, হাতে থাকা সেলফোনের আলো প্রক্ষেপনই যেন এখন বাংলাদেশের বিজয়ের আরেক নাম হয়ে দাঁড়ালো।
দর্শকরা যখন বিজয় উদযাপন শুরু করেছিলেন, তখনও কিন্তু জয় আসেনি। বিপদের মাত্রা এর পরের ওভারেই ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তেন্দাই চিসোরো। লিটন কুমারকে আউট করে। কিন্তু মাশরাফি বিন মর্তুজা যে তখনও বাকি, সেটা হয়তো জানা ছিলই দর্শকদের। এই এক ক্রিকেটারের ঘাড়ে চড়ে আরও কত ম্যাচই তো বাংলাদেশ জিতেছে। সুতরাং আজ তিনি হতাশ করবেন কেন?
হতাশ করলেন না মাশরাফি। বরং, দর্শকদের আনন্দকে ষোলকলায় পূর্ণ করতেই যেন লুক জংউইকে একবার বাউন্ডারি ছাড়া করলেন। ১৮তম ওভারের তৃতীয় বলটা বাউন্ডারি ছাড়া করার পর জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল আর মাত্র দুই রান। হাতে তখনও ১৫ বল বাকি। কিন্তু অপেক্ষা করতে চাইলেন না মাশরাফি। জংউইকে আবারও হাঁকালেন। উইকেট এবং বোলারের মাথার ওপর দিয়ে সোজা মাঠের বাইরে। ছক্কা। মাশরাফির ছক্কায় বাংলাদেশ জিতে গেলো ৪ উইকেটের ব্যবধানে। দারুণ এক জয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জিম্বাবুয়েকে টানা ১৩ ম্যাচ হারালো বাংলাদেশ।
অথচ দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে। ১৫ মাস পর টি২০ দলে ফিরলেন এনামুল হক বিজয়। কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করার কোন সুযোগই পেলেন না তিনি। জিম্বাবুয়েকে ১৩১ রানে বেধে ফেলার পর তামিম ইকবালের সঙ্গে ব্যাট হাতে ইনিংস ওপেন করতে নামেন এনামুল হক বিজয়। কিন্তু মাত্র ২ বল মোকাবেলা করেই দুর্ভাগ্যক্রমে রান আউট হয়ে গেলেন তিনি।
১ম ওভারের শেষ বলে তামিমকে বল করেন পানিয়াঙ্গারা। তামিম খেলেন ডিফেন্সিভ শট। বল সোজা ফিল্ডার সিকান্দার রাজার হাতে। দ্বিধা দ্বন্দ্বে ছিলেন তামিম, রান নেবেন কি না। এটাই কাল হলো। শেষ পর্যন্ত তিনি রান নেয়ার আহ্বান জানালেন। রাজাও বল ফেরত পাঠালেন উইকেটে। উইকেটরক্ষক অনেক দূরে বল ধরলেও বেশ সময় পেলেন বিজয়কে আউট করার জন্য। স্রেফ ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যেতে হলো এনামুল হক বিজয়কে।
দুর্ভাগ্যক্রমে বিজয়ের উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ক্রিজে আসেন সাব্বির রহমান। ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করে একটা চমকই উপহার দিল টিম বাংলাদেশ। তামিমের সঙ্গে ভালো খেলছিলেন সাব্বির। কিন্তু ৬ষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে ক্রেইগ আরভিনের দুর্দান্ত এক ডাইভিং ক্যাচে পরিণত হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। বোলার ছিলেন চিসোরো। ৩৯ রানের জুটি গড়ে আউট হন তিনি। দলীয় রান ছিল তখন ৪৫। আর ১৮ বলে তিনি করেন ১৬ রান।
সাব্বিরের পর উইকেটে আসেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। তবে আজ মুশফিকের ব্যাট হাসতে পারেনি। ৫ বলে মাত্র ২ রান করে ফিরে যান তিনি। ক্রেমারের বলে সিকান্দার রাজার হাতে সহজ ক্যাচ দেন তিনি। ৫৪ রানে পড়লো তৃতীয় উইকেট।
এক প্রান্ত আগলে ধরে খেলে যাচ্ছেন তামিম ইকবাল তাকে। মুশফিক আউট হওয়ার পর তাকে সঙ্গ দিতে আসেন নাসির হোসেন। দ্রুত তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর যে বিপর্যয় দেখা দিল সেটা কাটানোর বেশ চেষ্টা করছিলেন তারা। ২৫ রানের জুটিও গড়েন। কিন্তু ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে গ্রায়েম ক্রেমারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান নাসির হোসেন।
তখনও ভরসা ছিলেন তামিম ইকবাল। কিন্তু বিপদ যেন পিছুই ছাড়ছে না। একই ওভারের ৫ম বলে আবারও উইকেট নিলেন ক্রেমার। ২৮ বলে ৩১ রান করা তামিম ইকবালকেও লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তিনি। সুতরাং, ৮০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে সত্যি সত্যিই বেশ বিপদে পড়ে গেলো বাংলাদেশ।
মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে ৩৮ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে জয়ের পথে নিয়ে আসেন লিটন কুমার দাস। ১২ বলে ১৭ রান করে চিসোরোর বলে ক্রেমারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। তখনও বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৪ রান। মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে জুটি বাধতে আসেন মাশরাফি।
শেষ মুহূর্তে জিম্বাবুয়ের ওপর ঝড় তোলেন যেন মাশরাফি। ১২ বলে করেন ১৫ রান। দুটি বাউন্ডারির সঙ্গে মারেন একটি ছক্কাও। ১৮তম ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা মেরেই বাংলাদেশকে প্রথম টি২০ ম্যাচে ৪ উইকেটের দারুণ এক জয় এনে দিলেন মাশরাফি। ১৪ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ ছিলেন ২২ রানে অপরাজিত।
জিম্বাবুয়ে বোলারদের মধ্যে ২৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন গ্রায়েম ক্রেমার। ১৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তেন্দাই চিসোরো। আগামী রোববার অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচটি।
পাঠকের মতামত: