বাংলাদেশ ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে খেলছে আগামী ৪ ও ৫ আগস্ট। সাকিব তামিম উত্তর আমেরিকা মাতানোর আগেই বাংলাদেশিদের আনন্দে ভাসালেন প্রবাসী ক্রিকেটাররা।
আমেরিকার মাটিতে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা সবার ওপরে উড়িয়েছে প্রবাসী ক্রিকেট তারকারা। যুক্তরাষ্ট্রের জৌলুসপূর্ণ ক্রিকেট আয়োজন ‘ডাইভারসিটি কাপ’ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ টাইগার্স। প্রতি বছর বাংলাদেশ টাইগার্স শক্তিশালী দল গড়লেও সেমি ফাইনাল ও রানার আপ হয়ে থেমে যেতে হয়েছে। ডাইভার্সিটি কাপ আইসিসি নথিভুক্ত জনপ্রিয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্র বৃহত্তর ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ডাইভার্সিটি কাপ ২০১৮ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ টাইগার্স। মিশিগান অঙ্গরাজ্যে ডাইভার্সিটি কাপ ক্রিকেটের ১৩তম আসরে বাংলাদেশ টাইগার্স মোট আটটি দল অংশগ্রহণ করে। প্রতিটি দলে বিভিন্ন দেশের জাতীয় দলের একাধিক খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেন।
আট দল দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। প্রতি গ্রুপ থেকে দুটি দল সেমিফাইনাল খেলে। বাংলাদেশ টাইগার্স ছাড়াও তারকা সমৃদ্ধ পাকিস্তান গ্রিন, ইউএসএ স্টার ও কানাডা ম্যাপল লিফ, ইন্ডিয়া ব্লুস, শ্রীলঙ্কা লায়ন, ইউএসএ ক্রিকেট একাডেমি ও মিশিগান ক্রিকেট লীগের বেস্ট খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া মিশিগান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশান একাদশ এ টুর্নামেন্টে অংশ নেয়।
টুর্নামেন্টের ১৩তম আসরের ফাইনালে ইন্ডিয়া ব্লুসকে তিন উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মত টুর্নামেন্টে শিরোপা জেতার গৌরব অর্জন করে করেছে বাংলাদেশ টাইগার্স। বল হাতে ৪ উইকেট ও ব্যাট হাতে ২২ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসে দলকে চ্যাম্পিয়ন হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বাংলাদেশ টাইগার্সের অধিনায়ক গোলাম আফসার।
ফাইনালে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পরে ইন্ডিয়া ব্লুস। কিন্তু মিডল অর্ডারের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ২০ ওভার শেষ ৯ উইকেটের বিনিময়ে ১৮০ রানের পাহাড় গড়ে করে টিম ইন্ডিয়া ব্লুস।
১৮১ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দারুণ। মাত্র ৭ ওভারে ৭৩ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ টাইগার্সের উদ্বোধনী জুটি। ২৮ বলে ৫৫ রানের মারমুখি এক ইনিংস খেলেন আলি ইমরান। তবে ইমরান আউট হলে টাইগার্সের ব্যাটিং অর্ডার ভেঙে পড়ে।
১৪ ওভার শেষ এক পর্যায়ে দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১১৯ রান। শেষ ৩৫ বলে ৬১ রানের কঠিন সমীকরণ দাঁড়ায়। তবে ক্রিকেটার সৈয়দ রাসেল ৫৫ (২৬) ও টাইগার্স দলের অধিয়ানক গোলাম আফসারের ২২ (১৩) বাংলাদেশ টাইগার্স জয়ের বন্দরে পৌঁছায়।
এ দু’জনের ব্যাটে ভর করে ৫ বল ও ৩ উইকেট হাতে রেখে শিরোপার স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশের পতাকা সবার উড়িয়েছেন প্রবাসী এ তারকারা।
এদিকে, এর আগে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ দল শক্তিশালী পাকিস্তান গ্রিন দলকে হারায়। তাদের হয়ে ৭ জন পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক খেলার ও ২ জন ফাস্ট ক্লাস খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন খেলোয়াড় এ ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন। সেমি ফাইনালের এ ম্যাচে ছিলেন কামরান আকমল, সালমান বাট ও মোহাম্মদ আসিফের মতো আন্তর্জাতিক তারকা খেলোয়াড়।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার আশরাফুল এই টুর্নামেন্টে গত বছর খেলেছিলেন। তার খেলার কারণে বাংলাদেশসহ ভারত ও শ্রীলঙ্কা বোর্ডের তালিকাভুক্ত খেলোয়াড়দের তোপের মুখে পড়তে হয়। তখন টুর্নামেন্টটির খবর বিশ্ব মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়।
বাংলাদেশ টাইগার দলের দলনেতা গোলাম আফসার হোসাইন, অন্যান্য খেলোয়াড়রা হলেন- জাকারিয়া উদ্দিন, ইফতেখার হোসাইন ইফতি, আলি ইমরান, আলি সামাদ, মাহফুজ রহমান, সৈয়দ রাসেল, অনিক চৌধুরী, বায়াজিদ সিদ্দিকী, রোমিও আহমেদ, কামরুজ্জামান, হামিদুর রশিদ, শান খান, জুবেল আহমেদ। দলের ম্যানেজার প্রকৌশলী সাদেক রহমান। ডিরেক্টর ইফতেখার আহমেদ।
এ বছর বাংলাদেশ জাতীয় দলের উয়েস্ট ইন্ডিস সফর, এ দলের শ্রীলঙ্কা সিরিজ চলার কারণে বাংলাদেশ দলের বড় কোনো তারকা খেলোয়াড় পাওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানালেন দলের সংগঠক এডি আনসার।
এ বছর ডাইভারসিটি কাপের ১৩তম আসর হলেও বাংলাদেশ টাইগার্স অংশ নেয় ২০১৩ সাল থেকে। বিগত বছরে আশরাফুল, সৈয়দ রাসেল, এনামুল হক জুনিয়র, তাপস বৈশ্য, আবু জাহেদ রাহি ও নাদিফ চৌধুরীসহ অনেক তারকা খেলোয়াড় এ টুর্নামেন্টে খেলে গেছেন।
বাংলাদেশ টাইগার্স দলের অন্যতম সংগঠকদের মাঝে ম্যানেজার সাদেক রহমান, দেলোয়ার আনসার, তানিম আহমেদ, রিফাত করিম, মাহবুবুর রহমান সানি মিশিগানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অসংখ্য ধন্যবাদ দেন। প্রতি বছরের মতো এবারেও বাংলাদেশ টাইগারের খেলার সময় প্রচুর বাংলাদেশি দর্শকদের উপস্থিতি থেকে দলকে উৎসাহ যুগিয়েছেন।
দল জয়ের বন্দরে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত হাজার খানেক দর্শক ছুটে আসে সবুজ টার্ফের বাইশ গজে। সবার ওপরে উড়াতে থাকে লাল সবুজের প্রিয় পতাকা। পুরস্কার বিতরণীতে যুক্তরাষ্ট্র ও মিশিগান ক্রিকেটের নেত্রীদের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তান দলের সাবেক দলপতি মেজবাহ উল হক।
ফাইনালের স্কোর কার্ড-
ইমরান ৫৫ (২৮ বল), জাকারিয়া ১৭ (১৭ বল), আলি সামাদ ১০ (৮ বল), ইফতখার ১ (৩ বল), সৈয়দ রাসেল ৫১ (২৬ বল), জুবেল ২ (৪ বল), মাহফুজ ৭ (৫ বল), বায়াজিদ ৯ (১০ বল), আফসার ২২ (১৩ বল)।