সোমবার ভোর রাতে সবাই যখন ঘুমে, অথবা ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন কেউ কেউ; তখনই শীতের রাত কাঁপিয়ে, ভবন কাঁপিয়ে ছড়িয়ে পড়লো আতঙ্ক। শহর ঢাকাসহ সারাদেশে ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে ৪ জানুয়ারি ভোর ৫টার একটু পরে।
ভূমিকম্প নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কয়েকজন চিত্রতারকা।
ওমর সানিঃ আল্লাহর অশেষ রহমত আছে বাংলাদেশের ওপর। নাহলে গত রাতে যে ভয়ানক রকমের ভূমিকম্প হয়েছে তাতে আমাদের দেশে অনেক ক্ষতি হওয়ার কথা। অন্যান্য দেশে এর চেয়ে কম ভূমিকম্পে অনেক বেশি ক্ষতি হয়। ভূমিকম্প যখন শুরু হয়, তখন সবার মতো আমরাও ঘুমিয়ে ছিলাম। কিন্তু এত বড় কম্পনে ঘুম ভেঙে যায়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাইরে চলে আসি। মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছিল যে সকালে উঠে ভয়ানক কোনো খবর আসে কি না! আল্লাহর অনেক কৃপা যে সে ধরনের কোনো খবর আসেনি বাংলাদেশ থেকে।
শাবনূরঃ ‘স্বামী-সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ যখন কম্পন শুরু হয়, বাড়ির সবাইকে নিয়ে খোলা জায়গায় যাই। আমার ছেলেটা সবার হুড়োহুড়ি দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আমার বাবা-মাসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিচে নেমে দেখি আশপাশের সবাই দাঁড়িয়ে আছে। অনেকক্ষণ রাস্তায় সময় কাটিয়েছি। কারণ আমরা জানি যে একবার ভূমিকম্প হলে কিছুক্ষণের মধ্যে আবার ভূমিকম্প হয়। আমরা সেটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এখন অনেক শান্তি লাগছে যে দেশের কোথাও কোনো খারাপ খবর পাইনি। সবার প্রতি পরামর্শ থাকবে এ ধরনের ভূমিকম্প হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় অবস্থান করুন। কারণ আমরা কেউই এ ধরনের ঘটনার খবর হতে চাই না।’
বাপ্পিঃ ‘কম্পন শুরু হওয়ার পর ঘুম ভেঙে যায়। সিঁড়িতে গিয়ে দেখি সবাই দৌড়ে নিচে নামছে। আমি সোজা চলে গেলাম ছাদে। সেখান থেকে নিচে তাকিয়ে দেখি সরু রাস্তায় হাজারও মানুষের জটলা। আমার কাছে অনেক খারাপ লাগল, এই যে সবাই নিজের জীবন বাঁচাতে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াল, সত্যি যদি বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ে তাহলে ওদের কী হবে? কারণ আমাদের বাসাবাড়ির পাশে যে রাস্তা থাকে সেটা এত সরু যে বিল্ডিং ভেঙে পড়লে রাস্তা আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেখানে কারো পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তবে আমার একটা পরামর্শ আছে, সবাই একটা করে লোহার ঘর বানাতে পারে। সেখানে কিছু শুকনা খাবার, টর্চলাইট, একটা হ্যান্ডমাইক রাখতে পারেন। যখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটবে আপনি সেই লোহার ঘরে প্রবেশ করবেন। দেখবেন সপ্তাহ বা দশদিনের মাথায় আপনাকে কেউ উদ্ধার করতে আসবে। আমি মজা করছি না। এ ধরনের ঘটনা সারা বিশ্বেই ঘটে, তারা বাঁচার পথও রাখে। কিন্তু আমাদের দেশে যেভাবে নিয়ম না মেনে বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে তাতে করে এক সময আসলে এই লোহার বিল্ডিং ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’
মাহিয়া মাহিঃ ‘কম্পনে সবার মতো আমারও ঘুম ভেঙে যায়। প্রথমে বুঝতে পারিনি কি হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে বোঝা গেল এটা ভূমিকম্প। এটাও বুঝতে পারছিলাম যে সবাই হুড়োহুড়ি করে বাইরে যাচ্ছে। কিন্তু আমি আর বিছানা থেকে উঠতে পারিনি। কারণ এ তো শীতের মধ্যে কীভাবে বাইরে যাব? আমি বিছানায় বসে সুরা পড়তে লাগলাম। ভাবলাম বিল্ডিং ভাঙ্গলে তো মরেই যাব। শেষবারের মতো বিছানায় শুয়ে সুরা পড়ছিলাম। পরে দেখলাম কম্পন থেমে গেছে। একটু ভয়ও পেয়েছিলাম।’
তাছাড়াও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘোরাফেরা করছে এ কম্পন-ইস্যু। সবাই ভূকম্পনকালীন অভিজ্ঞতা জানান দিচ্ছেন।
সংগীতশিল্পী শাফিন আহমেদ লিখছেন, ‘এখন ৫টা ১৫ মিনিট। রিহান এবং নাহিনকে (তার দুই সন্তান) নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে আছি রাস্তায়। আমার অভিজ্ঞতার সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্প এটা। সাত তলা থেকে দ্রুত নেমে এসেছি।’
বাড়িঘর কেঁপেছে। শাফিন আহমেদের মতো অনেকেই রাস্তায় নেমে এসেছেন আতঙ্কিত হয়েছে। এ কম্পনকে তিনি যেমনটা বলছেন তার অভিজ্ঞতার ‘সবচেয়ে তীব্র’ হিসেবে, একই ধারণা অভিনেত্রী মমরও। তিনি লিখেছেন, ‘এই প্রথম এভাবে সারা বাসা কেঁপে উঠলো ভূমিকম্পে। এই প্রথমবার এতো ভয় পেলাম।’
গত বছরের ২৫ এপ্রিল যে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রায়বিধ্বস্ত হলো নেপাল, ওই সময় নাটকের শুটিংয়ে নেপালে ছিলেন অভিনেত্রী রুনা খান। তার স্মৃতিতে ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা অনেক ভয়াবহ। তাই গত রাতের ভূমিকম্পের পর তিনি লিখছেন, ‘ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা আমার যে কী ভয়ংকর, তা আমিই জানি। ওই ভয় আমি আর পেতে চাই না।’
এই ভূমিকম্পের ঘটনায় সবাই যখন আতঙ্কিত, তখন গীতিকার-অভিনেতা মারজুক রাসেল নস্টালজিক। ১৬ বছর আগের এক সন্ধ্যায় পান্থ কানাইয়ের সঙ্গে চা দোকানে বসে ভূমিকম্প নিয়ে মুখে মুখে গানই বেঁধে ফেলেছিলেন তিনি। সে গানের ক’লাইন জানিয়েও দিয়েছেন একফাঁকে।
মডেল-অভিনেত্রী সাবিলা নূর এমনই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন ঘটনার আকস্মিকতায় যে, প্রতিজ্ঞাই করেছেন ‘আর জীবনেও ঝগড়া করবো না!’ তার ধারণা, এটা ‘রাগ করার ফলাফল’! ভূমিকম্পের ঘটনা শুনে সুদূর আয়ারল্যান্ড থেকে সবাই নিরাপদ আছেন কি-না জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মিস আয়ারল্যান্ড মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি।
অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন অভিনেতা সাজু খাদেম, নিরব, অ্যালেন শুভ্র, সাইমন সাদিক, সালমান মুক্তাদির, সংগীতশিল্পী কনা, আলিফ আলাউদ্দিন, প্রীতম আহমেদ, ইমরান মাহমুদুল, তিশমা, অভিনেত্রী সোহানা সাবা, মৌসুমী নাগ, বিদ্যা সিনহা মিম, সুজানা, ঈশিকা খান, তাসনুভা এলভিন, শেহতাজ মুনিরা হাশেম, তানহা তাসনিয়া, মডেল ইমতু, সংবাদ পাঠিকা ফারহানা নিশো, গীতিকার আসিফ ইকবাল, শফিক তুহিন, নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাসসহ প্রত্যেকেই। সবাই যখন আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন, তখন কি-না উপস্থাপিকা আমব্রিন ‘ভূমিকম্পের ভয়ে ছাদে’ উঠেছেন! ফেসবুকে লিখেছেন সে অভিজ্ঞতা।
কাজের কাজটি করেছেন মডেল নাফিসা কামাল ঝুমুর। ভূমিকম্পকালীন কী সতর্কতা নেওয়া জরুরি, সে বিষয়ে ভিডিও পোস্ট করে সতর্ক করতে চেয়েছেন সবাইকে। নির্মাতা আবু শাহেদ ইমনও গুরুত্ব দিয়েছেন এ সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর।
পাঠকের মতামত: