cycloneবঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়রোয়ানু’ উপকূলের দিকে আরো এগিয়েছে। এটি শনিবার দুপুর নাগাদ বরিশাল-চট্রগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কি.মি. যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাসহ সারাদেশে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

শনিবার (২১ মে) সকাল ৬টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিন ১৭-তে এ তথ্য জানানো হয়।

এই বুলেটিনে আরো বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ২৫৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় প্রচণ্ড বাতাস বইছে, সঙ্গে হচ্ছে প্রবল বৃষ্টিপাত। ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা সম্পর্কে আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৭ নম্বর বিপদ সংকেত বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ০৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস সম্পর্কে জানানো হয়, উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারি থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কি.মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এদিকে শুক্রবার দুপুর থেকেই মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া শুরু হয়েছে। ১৮টি জেলার ৩ হাজার ৮৫১টি আশ্রয়কেন্দ্রে এসব মানুষকে আনা হয়। তাদের থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছেন ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির (সিপিপি) ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। মাঠে থাকবেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রোভার স্কাউট ও আনসার ভিডিপি সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ ও সচিব মো. শাহ কামালসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ১৮ জেলার প্রায় সাড়ে ২১ লাখ মানুষকে। বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীন রুটের নৌ চলাচল। ঘূর্নিঝড়টির প্রভাবে গত দু’দিন ধরে দেশের সব অঞ্চলেই বৃষ্টি হয়েছে, যা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি মোকাবেলায় ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবকসহ সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।

রোয়ানুর প্রভাবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)। সংস্থাটির পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মফিজুর রহমান জানান, খারাপ আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার বিকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না পর্যন্ত সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় চট্টগ্রামে ৪৭৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোজবাহ উদ্দিন। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রামে ২৪২টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একই সাথে ঘূর্ণীঝড় পরবর্তী বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধস ঠেকাতে ইতোমধ্যে মাইকিং শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃহস্পতিবার থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী শনিবার ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।