মসজিদ আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় স্থান। আল্লাহর মুমিন বান্দারা মসজিতে গিয়ে তার ইবাদত করে, তার কাছে প্রার্থনা করে। তাই মুসলমানদের কাছে মসজিদ একটি পবিত্র স্থান। এজন্য মসজিদে আসা যাওয়া করতে কিছু আচরণ মেনে চলা খুবই গুরুত্তপুর্ণ।
আসুন জেনে নেই সেগুলোঃ
ডান পায়ে প্রবেশ ও বাম পায়ে বের হওয়াঃ
মসজিদে প্রবেশের সময় ডান পা আগে রেখে প্রবেশ করা এবং বের হওয়ার সময় বাম পা আগে রেখে বের হওয়া। কারণ সাহাবি হজরত ইবনে ওমর (রা.) এরূপ করতেন এবং নবী করিম (সা.)-এর সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পারতপক্ষে সব কাজ ডানদিক থেকে করা পছন্দ করতেন।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
মসজিদে যেতে তাড়াহুড়ো না করাঃ
মসজিদে জামাত ধরতে গিয়ে অনেকেই তাড়াহুড়ো করেন। এটা ঠিক নয়। ধীরস্থিরভাবে মসজিদে প্রবেশ করা সুন্নত।
তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করাঃ
মসজিদে প্রবেশের পর দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজ আদায় করার আগে না বসা। এ বিষয়ে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সে যেন না বসে যতক্ষণ দুই রাকাত নামাজ না পড়ে।’ –সহিহ বোখারি
সুতরা স্থাপন করাঃ
একা একা নামাজ আদায়কালে সামনে কিছু না থাকলে আড়াল তথা সুতরা নেয়া। (সুতরা এমন বস্তুকে বলা হয়, যা নামাজি তার সম্মুখে রাখে, যেন তার সামনে দিয়ে কেউ না যায়)।
আজানের পর মসজিদ থেকে বের না হওয়াঃ
মসজিদে আজান হওয়ার পর কোনো সঙ্গত কারণ ছাড়া মসজিদ থেকে বের হওয়া নিষেধ। হজরত আবু শাশা (রহ.) বলেন, আমরা সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর সঙ্গে মসজিদে বসেছিলাম, অতঃপর মুয়াজ্জিন আজান দিল। তারপর এক ব্যক্তি উঠে বেরিয়ে যেতে লাগল। অতঃপর হজরত আবু হুরায়রা (রা.) তার দিকে চেয়ে থাকলেন, যতক্ষণে সে মসজিদ থেকে বের না হলো। তারপর তিনি বললেন, ‘এ ব্যক্তি আবুল কাসিম [নবী (সা.)]-এর অমান্য করল।’ –সহিহ মুসলিম
মুখের দুর্গন্ধ দূরঃ
করা মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা রসুন, বিড়ি, তামাক তথা দুর্গন্ধ জাতীয় কিছু না খাওয়া। মুখে দুর্গন্ধ থাকলে তা দূর করে মসজিদে যেতে হবে। এজন্যই নামাজের আগে মেসওয়াকের প্রতি অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করাঃ
মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং মসজিদের জিনিসপত্রের হেফাজত করা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার কাছে আমার উম্মতের নেক কাজ এবং গোনাহর কাজ পেশ করা হয়। আমি তাদের সৎ আমলের মধ্যে পেলাম যা রাস্তা থেকে সরানো কষ্টদায়ক বস্তু। আর তাদের পাপ আমলে পেলাম নাকের আবর্জনা, যা দেখেও মসজিদ থেকে পরিষ্কার করা হয় না।’ –সহিহ মুসলিম
মসজিদে ক্রয়বিক্রয় না করাঃ
এমন কাজ না করা উচিত, যা মসজিদের আদব বহির্ভূত। যেমন, ক্রয়-বিক্রয় করা, হারানো বস্তু খোঁজা এবং এরূপ আরও অন্য কিছু। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যদি তোমরা কাউকে মসজিদে কোনো কিছু বিক্রি কিংবা খরিদ করতে দেখ, তাহলে বল, আল্লাহ যেন তোমার ব্যবসায় লাভ না দেন। আর যদি কাউকে সেখানে হারানো বস্তু খুঁজতে দেখ, তাহলে বল, আল্লাহ যেন তোমাকে তা ফিরিয়ে না দেন।’ -তারগিব ও তারহিব: ২৯১
মসজিদে শোরগোল না করাঃ
মসজিদে খেল-তামাশা, অনর্থক দুনিয়াবি কথাবার্তা এবং উঁচু শব্দে এমনভাবে কোরআন তেলাওয়াত না করা, যার কারণে অন্য নামাজি, জিকিরকারী এবং মসজিদে দ্বীনের শিক্ষা প্রদানকারীদের কষ্ট হয়।
নামাজে কাতার সোজা করাঃ
নামাজের সময় মসজিদে লাইন সোজা করা এবং লাইনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। নবী (সা.) স্বয়ং লাইন সোজা করতেন এবং বলতেন, ‘বরাবর হয়ে যাও, ভিন্ন ভিন্ন হইও না; নচেৎ আল্লাহ তোমাদের অন্তরকে ভিন্ন ভিন্ন করে দেবেন, বড় ও জ্ঞানীরা যেন আমার কাছে থাকে।’ (মুসলিম)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা লাইনগুলো সোজা করে নেবে; কারণ লাইন সোজা হওয়া পূর্ণাঙ্গ নামাজের পরিচয়।’ –সহিহ মুসলিম
মসজিদে ভিক্ষা না করাঃ
মসজিদে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছে দোয়া-প্রার্থনা না করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অবশ্যই মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে তোমরা অন্য কাউকে ডেক না।’ -সূরা জিন: ১৮
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।