সংকট সমাধানে প্রয়োজনে আগামী ৪০ দিনের মধ্যে ১ লক্ষ টন পেঁয়াজ ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির মাধ্যমে আমদানি করার কথা জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
ভবিষ্যতে পেঁয়াজ সংকট সমাধানে আগামী তিন বছরের মধ্যে এই পণ্য উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীল হতে সরকার কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ফারস হোটেলে ‘নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধকল্পে ব্যবসায়ী সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এই কথা জানান মন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটি এ আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।
বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, ‘এই সমস্যা (পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি) আমাদের ওভারকাম করতে হলে আমাদের আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। এছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই। আমরা ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবো আর ভারত যখন খুশি তখন পেঁয়াজ দেয়া বন্ধ করে দেবে, তাহলে আমরা কীভাবে পেঁয়াজের বাজার ঠিক রাখবো?’
“উপায় একটাই আমাদের এই পণ্য উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। সেদিন আমি এবং প্রধানমন্ত্রী বসেছিলাম। পেঁয়াজ নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেছেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে আমাদের যেভাবে হোক আত্মনির্ভরশীল হতেই হবে।”
তিনি বলেন, ‘ক্রাইসিস আমাদের আছে। তবে এই ক্রাইসিস সবসময় থাকবে না। পেঁয়াজ ডাবল-ট্রিপল দামে কিনে আমরা মরে যাবো না। আমাদের শিক্ষা হয়েছে। কথায় আছে, কখনো কখনো বিপদ সম্পদে রুপান্তর হয়। ক্রাইসিস আমরা ফেস করবো, ওভারকামও করবো।’
“গতকাল সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দরকার হলে আগামী ৪০ দিনের মধ্যে ১ লক্ষ টন পেঁয়াজ আমি ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারে নিয়ে আসবো। আমরা এই বিপদটাকে সম্পদে রুপান্তর করবো।”
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত ৬দিন ধরে মিশর থেকে পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ-তারা বলেছে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টন পেঁয়াজ দেবে। সবচেয়ে আনন্দের কথা তারা বলেছে, তারা এক টাকাও প্রফিট করবে না। যত কোটি টাকা লাগে ইনভেস্ট করবে। এক টাকা লাভ করবে না। গত ৩ দিন ধরে তারা টিসিবিকে যা দিয়েছে সেটা সর্বসাকুল্যে খরচ পড়েছে সাড়ে ৪২ টাকা। তারা সেই দামের কস্ট প্রাইসের কাগজ পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছে। তবে সমম্যাটা হয়েছে এই কোয়ান্টিটি যথেষ্ট নয় আমাদের বাজার সার্ভ করার জন্য। আমাদের আরো পেঁয়াজ দরকার।’
ন্যায্য লাভ রেখে বাজারে পেঁয়াজ ছাড়তে ব্যবসায়ীদের মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, ‘সিটি বা মেঘনা গ্রুপ যে পেঁয়াজ দিচ্ছে, এর বাইরেও কিছু কিছু পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ঢুকছে। তার মূল্যও কিন্তু কোনো অবস্থায় ৪০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারা তো বিক্রি করছে বেশি। আপনাদের সেই মানবিক মূল্যবোধটা কোথায়?’
“একটাই পথ সেটি হচ্ছে যথেষ্ট পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করা। যারা সময়টাকে সুযোগ হিসেবেকাজে লাগাচ্ছে তারা এক ধরনের মুনাফা লোভী। যারা দুর্ভিক্ষের সামনে, ক্রাইসিসের সামনেও নিজেদের মূল্যবোধকে জাগ্রত করে না, তারা ব্যবসায়ী হতে পারে না।”
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষকে অভুক্ত রেখে ক্রাইসিসে রেখে আপনারা প্রফিট করেন সমস্যা নাই, লজিক্যাল প্রোফিট করেন। ৫টাকা লাভ রেখে বাজারে পেঁয়াজ ছাড়েন। এরপরও বাজারে ৫০/৫৫ টাকা কেজি পেঁয়াজ হবে।”
পেয়াজ উৎপাদনে ভবিষ্যতে কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পায় সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণেরও কথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
“আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার যখন পেঁয়াজ উঠবে আমি কোনো ধরনের আমদানি করতে দেবো না। আমার উৎপাদকদের দাম পেতে হবে। তারা যদি ভালো দাম য়াজন্য কারো দরকার হবে না। তিন বছরে ইনশাল্লাহ আত্মনির্ভরশীল হবো। প্রয়োজনে আমরা ভারতে রপ্তানি করবো।”
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘২৯ সেপ্টেম্বর যখন ভারত পেঁয়াজ বন্ধ করে দিল। সেদিন সন্ধ্যার সময়ে ঢাকার বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কথা নয়। পেঁয়াজ তো তখন স্টকে ছিল। কোনো কোনো ব্যবসায়ী সাথে সাথে সেই সুযোগটা নিয়ে নিয়েছে।’
“আমাকে বহুবার বলা হয়েছে জেলে দেন, ক্রসফায়ারে দেন। কোথাও বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। আমার এক সেকেন্ডও লাগবে না পদত্যাগ করতে। কোনো সমস্যা নাই আমার। তাতে যদি দেশের সবকিছু বিশেষ করে পেঁয়াজের দাম ঠিক যেতো। এই মন্ত্রীত্ব কাজ করার জন্য, জব করার জন্য।’
সাংবাদিকদের দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে আরো দায়িত্বশীল এবং ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ও শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিতে সূচনা বক্তব্য দেন সদস্য সচিব আব্দুস ছাত্তার।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।